Top News

শিশুসহ নিহত ২২ জন! নেপালে ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তাক্ত বিক্ষোভ।

 


নেপালে জেনারেশন জেডের বিক্ষোভে উত্তাল দেশ, পদত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী ওলি।

কাঠমান্ডু, নেপাল: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরোপিত সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতি বিরোধী দাবিকে কেন্দ্র করে নেপালে জেনারেশন জেডের নেতৃত্বে শুরু হওয়া বিক্ষোভ সহিংস রূপ নিয়েছে। ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি।

সোমবার রাতে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকের পর সরকার ফেসবুক, ইউটিউব ও এক্সসহ ২৬টি প্ল্যাটফর্মে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। তবে এতে ক্ষুব্ধ জনতার উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি। মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ঘোষণার পরও হাজারো বিক্ষুব্ধ তরুণ রাজধানী কাঠমান্ডুর পার্লামেন্ট ভবন, সিংহ দরবার এবং একাধিক সরকারি স্থাপনায় ঢুকে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়।

ভক্তপুরের বালাকোটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা ও পুস্প কমল দাহালের বাসভবনও হামলার শিকার হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ক্ষুব্ধ জনতা ঘরবাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। পার্লামেন্ট কমপ্লেক্সের ভেতর ঢুকে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় তারা। কাঠমান্ডুর বাইরে পোখরা ও অন্যান্য শহরেও একই ধরনের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ২২ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। শতাধিক মানুষ আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সহিংসতার কারণে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, স্থগিত হয়েছে অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে জলকামান, রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জ ব্যবহার করে। তবে বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ—পুলিশ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে, যার ফলে এত প্রাণহানি ঘটেছে। নেপালের সেনাবাহিনী সতর্ক করেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে তারা সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে।

বিশ্লেষকদের মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্ত শুধু ক্ষোভ বাড়িয়েছে। দীর্ঘদিনের দুর্নীতি ও জবাবদিহিতার অভাব তরুণ প্রজন্মকে রাজপথে নামতে উদ্বুদ্ধ করেছে। সরকারের পদত্যাগ সত্ত্বেও জনরোষ এখনো থামেনি।

কে হবেন নেপালের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী এবং কীভাবে এই রাজনৈতিক অস্থিরতার সমাধান হবে—সে প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। তবে একথা স্পষ্ট যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভকে বিস্ফোরণমুখী করে তুলেছে, যা দেশটির রাজনীতিতে এক নতুন মোড় এনে দিয়েছে।

নবীনতর পূর্বতন