ঢাকা: ১২ নভেম্বর, ২০২৫
‘২৬-এর নির্বাচন দেখতে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে’—এই দাবি তুলে জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং উক্ত আদেশের ওপর গণভোটসহ ৫ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন মোড়ে আন্দোলনরত আটটি রাজনৈতিক দলের যৌথ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যারা জুলাই বিপ্লব মানবেন না, তাদের জন্য ২০২৬ সালের নির্বাচন নাই।
মূল দাবি: গণভোট ও সনদ বাস্তবায়ন.
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দিয়ে এর সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার জোর দাবি জানান। তিনি বলেন, “এদেশের মুক্তিকামী মানুষের কথা একটাই, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠিত হতে হবে।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, সকল দল গণভোটের ব্যাপারে একমত হওয়া সত্ত্বেও কেন তারিখ নিয়ে গড়িমসি করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই গণভোটের মাধ্যমেই আইনি ভিত্তির পাটাতন তৈরি হবে এবং এর ভিত্তিতেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ডা. শফিকুর রহমান আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে রোজার আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন এবং হুঁশিয়ারি দেন যে, কেউ যেন এ নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করার চেষ্টা না করে। তিনি জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারী সকল দলকে জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
অন্য দলের নেতাদের বক্তব্য.
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করিম (পীর সাহেব চরমোনাই) এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক বলেন, জুলাই বিপ্লবের পক্ষপাতি না হয়ে কেউ যদি বাহাত্তরের বাকশালপন্থী হয়, তবে তাদের অবস্থা আওয়ামী লীগের মতোই হবে। তিনি বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হলে কারো কোনো সমস্যা হবে না, বরং জাতি একটি নতুন বাংলাদেশ পাবে।”
খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল বাসিত আজাদ বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিতে গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন এক দিনে সম্ভব নয়, তাই আগে গণভোট দিয়ে সনদের বাস্তবায়ন আদেশ জারির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ব্যতীত কোনোভাবেই ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন সংবিধানসম্মত হবে না।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান সতর্ক করে বলেন, নভেম্বরের মধ্যে জুলাই সনদের আদেশ জারি করে গণভোট না দিলে যমুনা ঘেরাও কর্মসূচির মাধ্যমে কঠোর আন্দোলনে নামতে জাতি বাধ্য হবে। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সভাপতি এডভোকেট আনোয়ারুল হক চাঁন বলেন, সরকার গণমানুষের দাবি উপেক্ষা করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতা.
সমাপনী বক্তব্যে মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করিম বলেন, জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন না হলে সেই নির্বাচন অবৈধ হবে। তিনি অভিযোগ করেন, যারা ক্ষমতার লোভি তারা জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চায় না কারণ এর আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা হলে তারা ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে পারবে না। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, গণভোটের দিন-তারিখ নিয়ে গড়িমসি জাতি মেনে নেবে না এবং “জনগণ রাজপথে নামলে আওয়ামী লীগের মতোই অস্তিত্ব হারাতে হবে।” জনগণের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন দুর্বার গতিতে চলতে থাকবে বলে নেতারা প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

