Top News

পঞ্চগড়ের পাঁচ শহীদের রক্তে রচিত বাংলাদেশের নতুন সূর্যোদয়।

 



"পঞ্চগড়ের পবিত্র রক্তাক্ত জুলাই: বীর শহীদদের স্মৃতিতে এক দেশের জাগরণ"

নবজাগরণ প্রতিবেদক | পঞ্চগড়, বাংলাদেশ | জুন ২০২৫,

পঞ্চগড়—বাংলাদেশের উত্তরের প্রান্তিক এই জনপদ যেন ইতিহাসের পাতায় রক্তের অক্ষরে লিখে রেখেছে এক অমর অধ্যায়। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া সেই অভ্যুত্থান, যা আজ আর কেবল একটি রাজনৈতিক মোড় নয়—এটি হয়ে উঠেছে আত্মত্যাগের এক বেদিমূর্তি, বীরত্বের এক শাশ্বত অনুপ্রেরণা।

এই অভ্যুত্থানে শহীদ পাঁচ তরুণের নাম আজ ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বল করছে। তাঁরা কেবল নিজেদের জীবন নয়, রেখে গেছেন অগণিত অপূর্ণ স্বপ্ন, কান্নায় ভেজা চোখ আর অসমাপ্ত সংসারের নীরব হাহাকার।

শহীদ সাজু—যার জীবনের গল্প এক ট্র্যাজেডির চেয়েও গভীর। নিজের সন্তানের মুখও দেখতে পারেননি তিনি। ২৭ জুলাই জন্ম নেওয়া সেই শিশু—আবু সাঈদ, আজ ১১ মাস বয়সে জানেই না, তার নামের পেছনে লুকিয়ে আছে ইতিহাস বদলানো এক চেতনার নাম। সে জানে না, তার পিতা তাকে পৃথিবীতে রেখে গেছেন একটি নতুন দেশের বীজ রোপণ করে।

মাত্র ১৯ বছর বয়সী শহীদ সাজুর স্ত্রী, হঠাৎ বিধবা হওয়ার বেদনায় দিশেহারা। যে ঘরে সদ্য জন্মেছে নতুন প্রাণ, সেখানে এখন গভীর শূন্যতা।

অন্যদিকে, শহীদ শাওন রেখে গেছেন তিন বছরের একমাত্র সন্তান ও এক তরুণী স্ত্রীকে। ২২ বছর বয়সী সেই নারী, জীবনের সব প্রশ্নের উত্তর হারিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়।

শহীদ সুমন ছিলেন পরিবারের জন্য আশার আলো—একজন বৃদ্ধ পিতা-মাতা আর তিন বোনের ভরসা। সেই স্বপ্নগুলো আজ যেন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নিস্তব্ধতায় ডুবে গেছে তাদের সংসার।

সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্যটি মেলে শহীদ সাগরের মায়ের চোখে। দীর্ঘ এক যুগ পর ছেলেকে ফিরে পাওয়ার স্বপ্নে বুক বাঁধলেও, এখন তাঁর বুক জুড়ে শুধু হাহাকার। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে, বাস্তবতা থেকে ছিটকে পড়েছেন এই একাকী মা।

এইসব করুণ অথচ গর্বিত অধ্যায়ের নাম—জুলাই অভ্যুত্থান। এটি কেবল রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস নয়, বরং এটি হলো সেই পরিবর্তনের আহ্বান, যা তৈরি হয়েছে মানুষের কান্না, রক্ত ও স্বপ্নের বিনিময়ে।

আজ যখন এই পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো হয়, তখন হৃদয় কেঁপে ওঠে। তাদের আত্মত্যাগে রচিত হয়েছে নতুন বাংলাদেশের সূচনা, যার প্রতিটি ইট, প্রতিটি পাথরে লেখা থাকবে এই শহীদদের নাম।

সমাপ্তি ভাবনা:

এই ইতিহাস কোনো একদিন ভুলে যাওয়ার জন্য নয়। শহীদ সাজু, শাওন, সুমন, সাগর কিংবা অজানা আরও শত তরুণের এই আত্মদান যেন চিরদিন মনে রাখে এই জাতি। একটুকরো রুটি, এক ফোঁটা চোখের জল কিংবা একটি অব্যক্ত কান্না—সব কিছুর ওপরে আছে এই স্বপ্ন: একটি স্বাধীন, সুবিচারভিত্তিক, মর্যাদাশীল রাষ্ট্র। সেই স্বপ্নের সাথে আর কোনো আপোষ নয়। আপোষ করতে দেওয়া হবে না—এই হোক অঙ্গীকার।

নবীনতর পূর্বতন