২১ জানুয়ারি ২০২৫ :
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে উত্তেজনা: বিএসএফের টিয়ারশেল হামলা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে
১৮ জানুয়ারি ২০২৫
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিরণগঞ্জ সীমান্তে গত শনিবার (১৭ জানুয়ারি) দিনের দীর্ঘ সংঘর্ষ এবং উত্তেজনার পর, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। এই সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৫ জন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন, তবে ভারতীয় সীমান্তে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। সীমান্তে বিজিবি (বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী) দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
ঘটনার সূত্রপাত: ফসল কাটার বিরোধ
ঘটনার শুরু হয় ফসল কাটাকে কেন্দ্র করে। ভারতীয় কৃষকদের অভিযোগ, বাংলাদেশের কৃষকরা তাদের গম ক্ষেত থেকে কিছু গম কেটে নিয়ে গেছেন। বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইমরান ইবনে রউফ জানিয়েছেন, সকালে কিছু বাংলাদেশি কৃষক গ্রিন লাইনের কাছে ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন, যা ভারতীয় কৃষকদের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়। ভারতীয় কৃষকরা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশিরা তাদের গম ক্ষেত থেকে কিছু গম চুরি করছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও সাংবাদিকরা বলছেন, ভারতীয় কৃষকরা প্রথমে উসকানি দিয়েছে। তারা বাংলাদেশের আমগাছ এবং অন্যান্য ফসল নষ্ট করতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতি দেখে, বিএসএফ বাধ্য হয়ে সাউন্ড গ্রেনেড এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে, যাতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত না হয়।
পাথর ছোঁড়া ও উত্তেজনা
এদিকে, উভয় পক্ষের কৃষকরা একে অপরকে গালিগালাজ করতে শুরু করে এবং পাথর ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হয়। ভারতীয় কৃষকরা এসময় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে এবং পাথর ছুঁড়তে থাকে। বাংলাদেশিরা নিজেদের ক্ষেতের ঢিল ছুঁড়ে তাদের প্রতিহত করতে চেষ্টা করে। এমন অবস্থায়, বিএসএফ ভারতীয় নাগরিকদের দিকে সাউন্ড গ্রেনেড এবং টিয়ারশেল ছোঁড়ে, যাতে তারা সরে যায়।
বিএসএফের ভূমিকা: সঠিক পদক্ষেপ নেয়নি
বিজিবি ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বিএসএফ যথেষ্ট দ্রুত ও সঠিক পদক্ষেপ নেয়নি। ভারতীয় কৃষকরা গাছ কেটে নষ্ট করতে আসার পর বিএসএফের কার্যক্রম ছিল নিষ্ক্রিয়। বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইমরান ইবনে রউফ বলেন, "বিএসএফ ম্যানেজমেন্টে একটা ভুল করছে।" তিনি আরও বলেন, "যখন কৃষকরা গাছ কাটার চেষ্টা করছে, তখন বিএসএফ তাদের বাধা দিতে পারে ছিল, কিন্তু তারা সেভাবে কাজ করেনি।"
বিজিবি’র ভূমিকা: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা
এছাড়া, বিজিবি পরিস্থিতি শান্ত করতে ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়। সীমান্তে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং প্রায় ৯ ঘণ্টা পর, বিজিবি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলতে থাকে, তবে এরপর দুই বাহিনী পতাকা বৈঠক করে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য একটি সমঝোতায় পৌঁছায়।
পতাকা বৈঠক: দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে সমঝোতা
বিজিবি এবং বিএসএফের পতাকা বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত হয় যে, তারা সীমান্তবর্তী জনগণকে সরিয়ে নেবে এবং উত্তেজনা প্রশমিত করতে হবে। কর্নেল ইমরান ইবনে রউফ জানান, "আমরা যখন লোকজনকে সরাতে বলছিলাম, তখন ভারতীয় বাহিনী তাদের সীমান্তের দরজা বন্ধ করে দেয়, কিন্তু আমাদের লোকজনকে সেখানে আসতে কিছুটা সময় লেগেছে।"
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সীমান্ত পরিস্থিতি
এই ঘটনার সাথে গত কয়েকদিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে কিছু উত্তেজনা ছিল। ৬ জানুয়ারি, সীমান্তের ১২০০ গজ অংশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে ভারতীয় বাহিনী কাজ শুরু করেছিল, তবে বাংলাদেশি বাহিনী তা থামাতে বাধা দেয়। এর পরদিনও এ নিয়ে বৈঠক হয়, তবে নির্মাণ কাজ আবারও শুরু হয়। সীমান্তের এই অংশে উত্তেজনা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবারের সংঘর্ষ ঘটে।
শেষ কথা:
এই উত্তেজনার মধ্যে, সীমান্তের পরিস্থিতি এখন কিছুটা শান্ত হলেও, দুই দেশের কৃষকরা ক্ষোভ নিয়ে আছেন। তবে, বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে সাম্প্রতিক সমঝোতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সীমান্তে শান্তি ফিরে এসেছে।