Top News

বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়নে চীনা প্রযুক্তি: দুই দেশের মধ্যে নতুন যুগের শুরু?

 



বাংলাদেশ-চীন নতুন কৃষি অধ্যায়ের পথে: বিনিয়োগ সম্মেলনে চীনা বাণিজ্যমন্ত্রীর আশ্বাস।

ঢাকা, ১ জুন ২০২৫:

বাংলাদেশের কৃষি, পাট, সামুদ্রিক মৎস্য এবং গবেষণা খাতে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সফররত চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও। রোববার ঢাকায় আয়োজিত ‘চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলন’-এ তিনি এই আশ্বাস দেন এবং পরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।

বৈঠকে চীনের মন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা আমাদের কোম্পানিগুলোর মাঝে আশাবাদ জাগিয়েছে। তারা এখন বাংলাদেশের বাজারে বিনিয়োগ করতে আরও আত্মবিশ্বাসী।” চীনা প্রতিনিধিদলে থাকা ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

চীনের ভোক্তা বাজার বিশ্লেষণ তুলে ধরে মন্ত্রী জানান, “রাত ১০টার পরও বাংলাদেশের শপিংমলগুলোতে ভিড় দেখে আমি মুগ্ধ। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে—এটি একটি অভাবনীয় সম্ভাবনা।”

অন্যদিকে, অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে এখনো বিপুল সম্ভাবনা অরক্ষিত পড়ে আছে, বিশেষ করে কৃষি ও নদীভিত্তিক মাছ উৎপাদনে।” তার মতে, “চীনের সহযোগিতায় প্রতিটি গ্রামকে একটি উৎপাদনশীল ইউনিটে রূপান্তর করা সম্ভব।”

চীনা মন্ত্রী একমত হয়ে বলেন, “কৃষি কেবল একটি শিল্প নয়, এটি একটি সামাজিক কাঠামো। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কৃষির নানা শাখায় পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করতে আগ্রহী—যেমন জমির উন্নয়ন, পানি সংরক্ষণ ও চাষাবাদের প্রযুক্তি।”

মৎস্য ও সামুদ্রিক সম্পদ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, “চীন বর্তমানে গভীর সমুদ্র মৎস্য আহরণ প্রযুক্তিতে বিশ্বে শীর্ষে। বাংলাদেশ যদি নির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়, তাহলে যৌথ প্রকল্পে আগ্রহী আমরা।”

পাট খাতেও উভয় দেশের মধ্যে নতুন সম্ভাবনার কথা উঠে আসে। চীন বছরে প্রায় ১০ কোটি ডলারের পাটপণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে, যা বাংলাদেশের মোট পাট রপ্তানির ১০ শতাংশের সমান। মন্ত্রী বলেন, “আপনার (প্রধান উপদেষ্টার) বক্তব্যের পরই আমাদের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের পাট নিয়ে গবেষণা শুরু করতে উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যবসার বাইরেও গবেষণায় আমরা সহযোগিতা করতে চাই।”

এ সময় অধ্যাপক ইউনূস প্রস্তাব দেন, বাংলাদেশের পাটপণ্য ডিজাইনাররা যেন চীনের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মিলে কাজ করতে পারেন।

বৈঠক শেষে চীনা মন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আপনার কথাগুলো আমার কানে সুরের মতো শোনায়। আপনার উপস্থিতি ও বক্তব্য পুরো জাতিকে আশা দেখিয়েছে।”

তিনি আরও জানান, “আমার সাম্প্রতিক চীন সফরে যেসব দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছিল, আপনার এই সফর তা আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।”

নবীনতর পূর্বতন