প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি: জুনের মধ্যেই নির্বাচন—টোকিও থেকে প্রধান উপদেষ্টার দৃঢ় বার্তা।
টোকিও, ২৮ মে ২০২৫ — এক গভীর দায়িত্ববোধ ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে।বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জাপানের মাটি থেকে পুনর্ব্যক্ত করলেন এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার—যে কোনো পরিস্থিতিতেই আগামী বছরের জুনের মধ্যে বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
চার দিনের জাপান সফরের শুরুতেই টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ-বান্ধব জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লিগ (জেবিপিএফএল)-এর প্রেসিডেন্ট তারো আসোর সঙ্গে বৈঠকে এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা।
জনগণের রায়ই চূড়ান্ত—এগিয়ে চলা সংস্কারের পথে।
বৈঠকে প্রফেসর ইউনূস স্পষ্ট করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের ভবিষ্যৎ ঘিরে তিনটি বিষয়কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে—গঠনমূলক সংস্কার, ২০০৬-০৮ সময়কালের ছাত্র-জনতার হত্যা মামলার বিচার এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন।
তার ভাষায়, “প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে, তরুণদের প্রতিরোধে নামতে হয়েছে। আজ তারা ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে আমাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে—দায়িত্ব নিচ্ছি, তবে শর্ত একটাই: জনগণের চূড়ান্ত রায়কেই শ্রদ্ধা করতে হবে।”
অর্থনৈতিক অগ্রগতির বার্তা ও বৈদেশিক সমর্থনের স্বীকৃতি।
প্রধান উপদেষ্টা জাপানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “গত দশ মাসে জাপান আমাদের পাশে থেকেছে। আজকের সফর, এক অর্থে, কৃতজ্ঞতা জানানোরও সফর।” তিনি উল্লেখ করেন, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো এবং ঋণ পরিশোধে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্ত ভিত দিচ্ছে।
অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা।
তারো আসো এবং জাপানি আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে বৈঠকে উঠে আসে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ)। উভয় পক্ষ আশাবাদী, আসন্ন সেপ্টেম্বরেই এই চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এটি কার্যকর হলে জাপান হবে প্রথম দেশ, যার সঙ্গে বাংলাদেশ ইপিএ করবে—ফলে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
রোহিঙ্গা সংকটে জাপানের সহায়তা প্রত্যাশা।
বৈঠকে আরও এক মানবিক ইস্যু উত্থাপন করেন ইউনূস—রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন। তিনি বলেন, “এটি শুধু আরেকটি শরণার্থী সংকট নয়, বরং এটি একটি জাতি তাদের ঘরে ফেরার লড়াই করছে। এখানে জাপানের সহানুভূতি ও ভূমিকা অতীব প্রয়োজন।”
ভবিষ্যতের দিগন্তে সম্মিলিত অঙ্গীকার।
প্রফেসর ইউনূস আমন্ত্রণ জানান তারো আসোকে—স্বয়ং বাংলাদেশে এসে সংস্কারের অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করার। এটি নিছক প্রটোকলের বিনিময় নয়, বরং আন্তরিক এক আহ্বান, যেন ভবিষ্যতের পথচলায় আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে আরও দৃঢ় ও অর্থবহ।
এই সফর শুধু কূটনৈতিক নয়, এটি এক রাজনৈতিক সংকল্পের প্রতিধ্বনি। একটি জাতি তার কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্রের পথে হাঁটছে—দৃঢ় পায়ে, চোখে স্বপ্ন আর কণ্ঠে প্রতিশ্রুতি নিয়ে।