আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে পদকজয়ী তরুণ প্রতিভাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার হৃদয়গ্রাহী সাক্ষাৎ।
ঢাকা, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫:
বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের উজ্জ্বল অর্জনকে সামনে রেখে সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হলো এক অনন্য সাক্ষাৎ। আন্তর্জাতিক গণিত ও জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে ব্রোঞ্জপদক জয়ী ছয় তরুণ শিক্ষার্থীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস
এই ছয়জন শিক্ষার্থী হলেন— সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের আরিজ আনাস, নটর ডেম কলেজের হা-মিম রহমান, মাস্টারমাইন্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ফারাবিদ বিন ফয়সাল, চট্টগ্রাম বাকলিয়া সরকারি কলেজের জিতেন্দ্র বড়ুয়া, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের জাওয়াদ হামীম চৌধুরী এবং ময়মনসিংহ জেলা স্কুলের তাহসিন খান। তাঁদের প্রত্যেকেই এবারের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে বাংলাদেশের নাম বিশ্বজুড়ে উজ্জ্বল করেছেন।
বৈঠকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন এবং নানা চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরেন। মনোযোগ দিয়ে তাঁদের বক্তব্য শোনেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “তোমাদের কথা শুনে আমি গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছি। নিজের আগ্রহ ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তোমরা প্রমাণ করেছ, বাংলাদেশের তরুণরা বিশ্বকে চমকে দিতে সক্ষম।”
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, সাধারণ সম্পাদক এ এ মুনির হাসান, জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তারিখ আরাফাত।
গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবছর সারাদেশ থেকে প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষার্থী প্রাথমিক পরীক্ষায় অংশ নেন। ধাপে ধাপে বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হয় আন্তর্জাতিক পর্বের ছয় প্রতিযোগী। জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের ক্ষেত্রেও প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চূড়ান্ত চারজন মনোনীত হন। দুই প্রতিযোগিতায়ই শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং নিজেরা চাঁদা তুলে ব্যয়ের বড় অংশ মেটান।
শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, “১১১ দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাংলাদেশের একজন শিক্ষার্থী গণিতে স্বর্ণপদক জিতেছে, আর বেশ কয়েকজন ব্রোঞ্জ অর্জন করেছে। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের গর্বের বিষয়। শিক্ষার্থীদের আরও উৎসাহিত করতে এবং আর্থিক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হলে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে।”
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার যোগ করেন, “দূরদূরান্তের মেধাবী শিক্ষার্থীরাও এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। কিন্তু আর্থিক সংকট প্রায়ই তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। রাষ্ট্র যদি সহায়তার হাত বাড়ায়, তবে বাংলাদেশ আরও বড় অর্জনের সাক্ষী হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা আশ্বাস দেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, “এরা শুধু আমাদের গর্ব নয়, এরা জাতির ভবিষ্যৎ সম্পদ। আমরা চাই, তাঁদের স্বপ্ন আরও বড় হোক এবং বাংলাদেশকে আরও উঁচুতে নিয়ে যাক।”