বিপিএলে ব্যাটিং বিপ্লব: নাঈম শেখ দেখালেন সম্ভাবনার দরজা: নবজাগরণ খেলা :

 ৩০ শে জানুয়ারি :


নাঈমের বিধ্বংসী ইনিংস ও উইকেট বিতর্ক: দেশি ব্যাটারদের ক্ষমতা কি অবমূল্যায়ন করা হয়?

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) বরাবরই ব্যাটারদের জন্য চ্যালেঞ্জিং এক মঞ্চ। লো-স্কোরিং ম্যাচের প্রবণতা, উইকেটের আনপ্রেডিক্টেবল আচরণ এবং ব্যাটসম্যানদের সীমিত সফলতা নিয়ে অনেকদিন ধরেই আলোচনা চলছে। তবে এবারের আসরে দৃশ্যপট কিছুটা বদলেছে। রানখরার সেই অতীত ছাপিয়ে বেশিরভাগ ম্যাচেই ভালো স্কোর উঠছে।

আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এমনই এক ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বিধ্বংসী ইনিংস খেললেন নাঈম শেখ। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে মাত্র ৫৫ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে খুলনা টাইগার্সকে এনে দিলেন ৪৬ রানের দাপুটে জয়। তাঁর এই বিস্ফোরক ইনিংস যেন দেশি ব্যাটারদের সামর্থ্য নিয়ে চলমান বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিল।

উইকেট কি আসলেই ব্যাটসম্যানদের জন্য বাধা?

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে নাঈম সরাসরি বললেন, ভালো উইকেট পেলে দেশি ব্যাটারদের নিয়ে যেসব প্রশ্ন ওঠে, তার জবাব মাঠেই দেওয়া সম্ভব। “দেশিদের নিয়ে প্রশ্ন উঠত আগে—বাউন্ডারি মারতে পারি না, চার-ছয় মারতে পারি না। ভালো ট্র্যাক দিন, অবশ্যই ভালো খেলব,”—এভাবেই নিজের অভিমত তুলে ধরেন তিনি।

তার মতে, বাইরের দেশে ব্যাটিং সহায়ক উইকেট পেলে ব্যাটাররা স্বচ্ছন্দে বড় শট খেলতে পারেন। বাংলাদেশেও যদি ভালো উইকেট দেওয়া হয়, তাহলে দেশি ব্যাটাররা একই রকম পারফরম্যান্স দেখাতে পারবেন। তার এই মন্তব্য দীর্ঘদিনের সেই বিতর্ককেই সামনে এনেছে—বিপিএলের উইকেট কি আসলেই ব্যাটসম্যানদের উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়?



ধারাবাহিকতার সন্ধানে নাঈম:

এই সেঞ্চুরির পরও নাঈম কিন্তু আত্মতুষ্ট নন। বরং তিনি মনোযোগ দিচ্ছেন ধারাবাহিকতা ধরে রাখার দিকে। “প্রথম দিন থেকেই চেষ্টা করছিলাম ফ্লো ধরে রাখার। দুই ম্যাচ বাদে বেশিরভাগ ম্যাচেই ভালো শুরু পাচ্ছিলাম। ওপেনার হিসেবে ৭০-৮০ রান করলে দলের কাজ সহজ হয়ে যায়,”—নিজের ব্যাটিং পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন তিনি।

গত কয়েক মৌসুম ধরেই তিনি ভালো শুরুর পর সেটিকে বড় রানে রূপ দিতে পারেননি। তবে এবার সেই জায়গায় উন্নতি করছেন বলে মনে হচ্ছে। তার ব্যাটিংয়ে নতুন সংযোজন হিসেবে এসেছে আগ্রাসী মনোভাব ও শৃঙ্খলা।

সফলতার পেছনের কারিগররা:

নিজের উন্নতির পেছনে কোচদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করেছেন নাঈম। বাবুল স্যার, সোহেল স্যার, আনোয়ার ভাইদের সঙ্গে কাজ করায় মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়েছেন বলে জানান তিনি। পাশাপাশি, মাইন্ড ট্রেনিং নিয়েও কাজ করছেন, যা তার ব্যাটিংয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।



দেশি ব্যাটারদের প্রতি আস্থা কতটুকু?

নাঈমের পারফরম্যান্স দেশি ব্যাটারদের সামর্থ্য নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ব্যাটিং সহায়ক উইকেট পেলেই কি তারা নিয়মিত বড় ইনিংস খেলতে পারবেন? নাকি এখনো উন্নতির অনেক জায়গা আছে?

বিপিএলের এবারের আসর সেই উত্তর খোঁজারই এক আদর্শ মঞ্চ। নাঈম শেখের মতো ব্যাটাররা যদি ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে পারেন, তাহলে দেশের ক্রিকেটে ব্যাটিং নিয়ে যে সংশয় ছিল, তা হয়তো দ্রুতই মুছে যাবে। তবে সেটার জন্য সঠিক উইকেট, মানসিক প্রস্তুতি ও ধারাবাহিক পারফরম্যান্সই হবে মূল চাবিকাঠি।


—নবজাগরণ ডেস্ক

Previous Post Next Post