কর্ণফুলীর হাহাকার: মানুষের অবহেলায় নদীর শেষ প্রান্তে যাত্রা: নবজাগরণ বাংলাদেশ :

 ২৭শে জানুয়ারি :


>কর্ণফুলীর সংকট: দখল ও দূষণে বিপন্ন চট্টগ্রামের নদী, জীবন ও ভবিষ্যৎ-


কর্ণফুলীর সংকট: দখল ও দূষণে হুমকির মুখে চট্টগ্রামের জীবন

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী, একসময় যে নদী ছিল অঞ্চলের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির মেরুদণ্ড, আজ দখল ও দূষণের করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত। নদীর স্রোত থেমে গেছে, তার বুক ভরে উঠেছে বর্জ্য আর দখলের ভারে। এই সংকট কেবল নদীর নয়, এটি চট্টগ্রামের মানুষের জীবন ও ভবিষ্যতের জন্যও এক বড় হুমকি।

নদীর দূষণ ও দখলের বাস্তবতা

গবেষণায় উঠে এসেছে, কর্ণফুলীর সাথে যুক্ত ৯০ শতাংশ কারখানার কোনো বর্জ্য শোধনাগার নেই। প্রতিদিন প্রায় ২,০০০ টন বর্জ্য সরাসরি কর্ণফুলীতে ফেলা হচ্ছে। দূষিত পানির কারণে নদীর গভীরতা কমছে, এবং জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। কর্ণফুলীর পানি বিষাক্ত হয়ে উঠছে, যা মানুষের স্বাস্থ্য এবং প্রকৃতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “দখল ও দূষণের কারণে কর্ণফুলী ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। নদী রক্ষায় প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর পরিকল্পনা।”

মানুষের আন্দোলন ও দাবি

কর্ণফুলীর এই বিপর্যয় থামাতে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ একত্র হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবাদ ও গণশুনানিতে তারা একজোট হয়ে দাবি তুলেছে—



1. কর্ণফুলীর তীর দখলমুক্ত করতে হবে।

2. নতুন বাজার বন্ধ করে পুরোনো বাজার পুনর্বহাল করতে হবে।

3. কারখানাগুলোর বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন বাধ্যতামূলক করতে হবে।

মানুষের ভাষায়, "নদীটি আমাদের জীবনের অংশ। এটি রক্ষা করতে না পারলে চট্টগ্রামের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।”

প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ

চট্টগ্রামের প্রশাসন বারবার কর্ণফুলী রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্যকর উদ্যোগের অভাব স্পষ্ট। বিভাগীয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, “কর্ণফুলীর মৃত্যু মানে চট্টগ্রামের জীবনধারা থেমে যাওয়া। নদী রক্ষায় এখনই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।”

তবে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে প্রয়োজন পরিকল্পিত পদক্ষেপ। কর্ণফুলীর মতো নদীগুলো বাঁচাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।



যা করতে হবে এখনই


প্রতিটি কারখানায় বাধ্যতামূলক বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন।

অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে নদীর প্রাকৃতিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা।

পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা চালু।

নদী সংরক্ষণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।

উপসংহার

কর্ণফুলী শুধু একটি নদী নয়; এটি একটি জনপদের হৃদস্পন্দন। এর মৃত্যু মানে চট্টগ্রামের জীবনধারা ও অর্থনীতির পতন। নদী রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

নদীর জীবন বাঁচলে জীবন বাঁচবে—এই বার্তাটি ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বস্তরে। আসুন, দখল ও দূষণের কবল থেকে কর্ণফুলীকে মুক্ত করি। কারণ, একটি নদীর বাঁচা মানে একটি জনপদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা।

Previous Post Next Post