নির্বাচনের আগে ‘বিচার ও সংস্কার’—জনসভায় জামায়াত আমিরের হুঁশিয়ারি।
লালমনিরহাট থেকে বিশেষ প্রতিবেদক.
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে নানা বিতর্ক ও দাবি। লালমনিরহাটের জেলা কালেক্টরেট মাঠে শনিবার দুপুরে এক বিশাল জনসভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—“বিচার ও সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না।”
এই বক্তব্যে তিনি রাজনৈতিক সহিংসতার শিকারদের বিচার এবং নির্বাচনপূর্ব কাঠামোগত সংস্কারকে ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁর কথায়, “দৃষ্টান্তমূলক বিচার এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার—এই দুই শর্ত পূরণ না হলে নির্বাচন শুধু অর্থহীনই নয়, তা আরও অস্থিরতা ডেকে আনবে।”
‘চুরি, কালো টাকা আর পেশিশক্তির নির্বাচন চাই না’
শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা চুরি, কালোটাকার আধিপত্য এবং পেশিশক্তি নির্ভর কোনো নির্বাচন চাই না। আমরা চাই সমতলের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড।” নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও প্রস্তুতির বিষয়ে মন্তব্য করে তিনি জানান, জামায়াত সব ধরনের সহযোগিতায় প্রস্তুত—তবে শর্ত একটাই, “সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, যেন মানুষের ভোটে মানুষের সরকার আসে।”
আওয়ামী লীগ শাসনকে ‘ফ্যাসিবাদী অধ্যায়’ বললেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনকালকে তিনি উল্লেখ করেছেন “ফ্যাসিস্ট শাসনের সময়” হিসেবে। তাঁর দাবি, “১৫ বছরের দীর্ঘ আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। যে দেশের মানুষকে ভালোবাসে, সে দেশ ফেলে পালায় না।”
তিনি বলেন, এই শাসনামলে বাংলাদেশ এক ‘জীবন্ত কারাগারে’ পরিণত হয়েছিল, যেখানে “ভিন্নমতের মানুষদের কণ্ঠ রোধ করতে মামলা, হামলা, গুম ও খুন” চালানো হয়েছে।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে তীব্র নিন্দা.
লালমনিরহাট সীমান্তে সম্প্রতি এক বাংলাদেশি শ্রমিক হাসিনুর রহমানের বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনাও উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে। শফিকুর রহমান বলেন, “সে কি মানুষ ছিল না? ঠান্ডা মাথায় গুলি করে একজন নিরস্ত্র নাগরিককে হত্যা—এটা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।”
বিজিবির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “আমরা তো তাদের (ভারতের) স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, শ্রদ্ধা দেখাই—তাহলে আমাদের জনগণ সেই সম্মান পাবে না কেন?”
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক—সমতা ও সম্মান চাই.
তিনি ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের পক্ষে হলেও সম্পর্কের ভিত্তি হতে হবে “সমতা ও পারস্পরিক সম্মান।” তিনি উল্লেখ করেন, “তিস্তা মহাপরিকল্পনা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিবছর উত্তরাঞ্চলের মানুষ তিস্তার দুঃসহ বন্যায় আতঙ্কে থাকে। এই ভোগান্তির অবসান দরকার।”
তিনি লালমনিরহাটে ব্রিটিশ আমলের পুরোনো বিমানবন্দর চালুরও দাবি জানান।
রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন ধারা?
এই জনসভায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সক্রিয় উপস্থিতি এবং খোলামেলা রাজনৈতিক বক্তব্যের ভেতর দিয়ে হয়তো এক নতুন কৌশল নির্ধারিত হচ্ছে। বিশেষ করে যখন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো ধীরে ধীরে সক্রিয় হচ্ছে, তখন জামায়াতের এই অবস্থান শুধু নিজেদের নয়, বৃহত্তর বিরোধী ফ্রন্টের অবস্থানকেও প্রভাবিত করতে পারে।
প্রতিবেদনের আলোচনায় উঠে এসেছে রাজনৈতিক স্বচ্ছতা, বিচারিক দায়বদ্ধতা ও সীমান্ত সুরক্ষা—এই তিনটি বড় প্রশ্ন, যা ভবিষ্যতের নির্বাচনী পরিবেশে জনগণের আস্থা তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।